Wednesday, April 29, 2015

অনুগল্প

                                     প্রেম                                   শেখর রায় 
                                                          
জয়শ্রী তুই নেই কাছে। তবু এই নববর্ষের কঘণ্টা আগে অপ্রত্যাশিত ভাবে তুই এসে দাঁড়ালি বই পাড়ায় বিদ্যাসাগরের অবয়বটির সামনে। চারদিক থমথমে যেন কেউ বাতাস মুঠোর মধ্যে ধরে আটকে রেখেছে। পথে বাস ট্রাম নেই। অবাক।
সেই দঃ কলকাতার ডোভার লেন থেকে মধ্য কলকাতায় এলি কি ভাবে রে পাগলি?
বলে, কেন হেঁটে।
তোর ভয় করে নি?
আমার ভয় পাবার থেকে তোমার জীবন বাঁচানো অনেক জরুরী। তর্জনী নির্দেশ করে বলে, ঐ দেখো পিছন ফিরে দেশরক্ষকদের প্রস্তুতি। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আবাসনে দেশের স্বার্থে ধরপাকর করার লক্ষে আগুয়ান বাহিনী। কি হাঁদার মত পার্কের এক কোনে বসে বই পড়ে যাচ্ছ। কোন হুশ নেই তোমার। খবরটাও পাওনি যে ওরা তোমাকে জামাই আদর করবে বলে খুঁজে চলেছে। আর এক মুহূর্ত নয় এখানে। নাও, আমার হাত ধরো। কাঁধের ঝোলা দাও আমায়। একটু ভান কর যে তুমি খুব অসুস্থ। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছ। আর মনে কর আমি তোমার বিয়ে করা ইস্ত্রী। (মুখে স্মিত হাসি।) তাই মাথায় দিলাম ঘোমটা।
আমি হতবাক এবং জয়শ্রীকে আত্ম সমর্পণ। তাকে নীরব অনুসরন। না, তবু পারেনি জয়শ্রী তার প্রিয় মানুষটিকে যমদূতের হাত থেকে বাঁচাতে।
পরদিন পয়লা বৈশাখ। শুনতে পাচ্ছি, রবীন্দ্রগীতি, 'এসো হে বৈশাখ, এসো এসো'। লম্বা লম্বা লোহার গরাদে হাত রেখে দাড়িয়ে ছিলাম মাথা অবনত করে। ভাবছিলাম, কি এমন দেশবিরোধী কাজ করলাম ! শুধু কিছু কবিতা ও দুচার লাইন গল্প ছাড়া আর কি অশ্বডিম্ব করিয়াছি প্রসব। হঠাৎ হাতের উপর আর এক কোমল অনিন্দ সুন্দর এক রমণীয় হাতের প্রিয় স্পর্শ।
আবার তুমি জয়শ্রী? কেন এলে এই মৃত্যুর কারাগারে?
তোমাকে একটা ছোট্ট কথা বলতে।
কি আবার বলবি রে তুই, হ্যা?
বকা দাও কেন। আমি তোমাকে ভালবাসি।            
এবারও হলাম হতবাক, শুধু ওর গ্রীক সৌন্দর্যের রোমান্টিক স্বেদশুভ্র মুখশ্রীর ওপর দীঘল টানা নীল চোখের দিকে অপলক চেয়ে থাকা। কতক্ষন মনে নেই। যার প্রতি কোনদিন মনোনিবেশ করতে পারিনি। শুধু যাকে চেনা মানুষ বলে ভেবেছি। তার পেটে না থুড়ি হৃদয়ে যে এই অনার্য যুবকের প্রতি এতো মমত্ব, এতো প্রেম। না না, মনে হয়েছিল এক দিবাস্বপ্নে ভেসে চলেছি। জয়শ্রী সুচিত্রা মিত্রের প্রিয় ছাত্রি। গরাদের ওপারে দাড়িয়ে গাইল তার মনের মানুষটির উদ্দেশে, "তোমায় নতুন করে পাব বলে, হারাই বারে বার"। না, আমি কোনদিন তাকে পাইনি আপন করে। কারন, বিনাবিচারে রাষ্ট্র দ্রোহিতার অভিযোগে বেকার এক রাজনৈতিক বন্দীর সাথে কেউ অমন সুন্দরী শিক্ষিতা মেয়ের বিয়ে দ্যায় নাকি। জয়শ্রী হারিয়ে গেছে। কিন্তু হারায়নি তার সুখ স্মৃতিটুকু। সে ফিরে ফিরে আসে নববর্ষের সাথে স্মৃতি রোমন্থনে।

                                     *************